ব্রেক ব্রেক কি
ব্রেক যে কোন যানবাহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট। এটি মূলত অ্যানার্জি অ্যাবসর্ব করার মাধ্যমে গাড়ির বেগ কমিয়ে আনে বা থামিয়ে দেয়। সাধারণত ঘর্ষণের মাধ্যমে ব্রেকিং হয়ে থাকে এবং ব্রেকিং এর সময় গতিশক্তি ঘর্ষণের মাধ্যমে তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রিজেনারেটিভ ব্রেকিং ব্যবহার করা হয় এবং সে সব গাড়িতে ব্রেকিং এর সময় গতিশক্তির একটি অংশ বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।যানবাহনে বিভিন্ন ধরনের ব্রেকিং সিস্টেম ব্যাবহার করা হয়। যেমনঃ ব্রেক কি
১। মেকানিক্যাল ব্রেকঃ এই ধরনের ব্রেকিং সিস্টেমে ড্রাইভার ব্রেক প্যাডেলে চাপ দিলে তা বিভিন্ন মেকানিক্যাল লিঙ্কেজ (যেমনঃ সিলিন্ড্রিকাল রড, ফাল্ক্রাম, স্প্রিং ইত্যাদি) এর সাহায্যে ব্রেকিং ফোর্স ব্রেক প্যাড বা ব্রেক শু তে যায়। এই ব্রেকিং সিস্টেম আগে সব থেকে বেশি জনপ্রিয় হলেও, এর ইফেক্টিভনেস কম হওয়াতে বর্তমানে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে।২। হাইড্রোলিক ব্রেকঃ এই ধরনের ব্রেকিং সিস্টেমে ড্রাইভার ব্রেক প্যাডেলে চাপ দিলে তা বিভিন্ন ইনকম্প্রেসিবল ফ্লুয়িড এর সাহায্যে ব্রেকিং ফোর্স ব্রেক প্যাড বা ব্রেক শু তে ট্রান্সমিটেড হয়। ব্রেক ফ্লুয়িড হিসাবে সাধারণত গ্লাইকল ইথার বা ডাই ইথাইল গ্লাইকল ব্যাবহার করা হয়।
হাইড্রলিক ব্রেক সিস্টেমে মাস্টার সিলিন্ডার, ব্রেক ফ্লুয়িড রিসারভার, পাইপিং সিস্টেম ও হুইল সিলিন্ডার থাকে। ব্রেক প্যাডেলে চাপ দিলে রিসারভার থেকে ব্রেক ফ্লুয়িড মাস্টার সিলিন্ডারে আসে। সেখান থেকে পাইপিং সিস্টেমের মাধ্যমে হুইল সিলিন্ডারে যায়। হুইল সিলিন্ডার থেকে ফ্লুয়িডের ব্রেকিং ফরস ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেকের পিস্টনে চলে যায় এবং এর ফলে গাড়ির বেগ কমতে থাকে।
হাইড্রোলিক ব্রেক সিস্টেমে মেকানিক্যাল ব্রেক সিস্টেমের থেকে অনেক বেশি ব্রেকিং ফোর্স জেনারেট করা যায়। তাছাড়া, এই ধরনের ব্রেকিং সিস্টেমে ব্রেক ফেইল করার সম্ভাবনাও অত্যন্ত কম।
৩। এয়ার বা নিউমেটিক ব্রেক সিস্টেমঃ এই ধরনের ব্রেক সিস্টেমের ওয়ার্কিং প্রিন্সিপল হাইড্রোলিক ব্রেকের মতই। কিন্তু এই সিস্টেমে ইনকম্প্রেসিবল ফ্লুই এর পরিবর্তে বাতাস ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ব্রেক সিস্টেমে এয়ার কম্প্রেসর, এয়ার রিসার্ভ ট্যাঙ্ক, চেক ভাল্ভ, সেফটি ভাল্ভ থাকে। ব্রেক প্যাডেলে চাপ দিলে কম্প্রেসরের মাধ্যমে বাতাসকে কম্প্রেস করে রোটরে পাঠানো হয়, যার ফলে ব্রেকিং সম্পন্ন হয়।
এয়ার ব্রেক সিস্টেম সাধারণত ট্রাক এবং অন্যান্য ভারি যানবাহনে ব্যবহার করা হয়। কেননা, এই ব্রেকিং সিস্টেমে হাইড্রোলিক ব্রেকের থেকে অধিক ব্রেক ফোর্স জেনারেট করা যায়। তাছাড়াও এই সিস্টেমে অধিক দূরত্বে ব্রেক ফোর্স ট্রান্সমিট করা যায়, যা বড় যানবাহনে প্রয়োজনীয় কিন্তু হাইদ্রলিক ব্রেকের মাধ্যমে সম্ভব নয়।
৪। ইলেক্ট্রিক্যাল ব্রেকঃ এই ধরনের ব্রেকিং সিস্টেম ইলেকট্রিক এবং হাইব্রিড গাড়িতে ব্যবহার করা হয়। অ্যাকসিলারেটর ছেড়ে দিলে মোটরে পাওয়ার ট্রান্সমিট বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু চাকার ঘূর্ণনের ফলে মোটর ঘুরতে থাকে এবং তা থেকে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেট হয়। ফলে ব্রেকিং সম্পন্ন হয়। এছাড়াও অনেক গাড়িতে ব্রেক প্যাডেলে চাপ দিলে মোটর এর পোলারিটি রিভার্স হয়ে যায়, যার ফলে ব্রেকিং সম্পন্ন হয়।
ইলেক্ট্রিক্যাল ব্রেকিং সিস্টেমে মেইনটেন্যান্স ব্যয় খুব কম, কেননা এদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর ব্রেক প্যাড বা শু পরিবর্তন করা লাগে না। তাছাড়া এদের লুব্রিকেটিং এরও প্রয়োজন হয় না। আর ঘর্ষণের মাধ্যমে ব্রেকিং না হওয়াতে হিটও জেনারেট হয় না।
ব্রেক সিস্টেমের মেকানিজমের উপর ভিত্তি করে ব্রেক আবার ২ ধরনের হয়:
১। ডিস্ক ব্রেকঃ এই ধরনের ব্রেক সিস্টেমে ব্রেক ক্যালিপার এবং ব্রেক রোটর নিয়ে গঠিত। রোটরটি হুইল হাবের মাধ্যমে চাকার সাথে যুক্ত থাকে এবং চাকার সাথেই ঘুরতে থাকে। ব্রেক ক্যালিপারটি রোটর এর উপর থাকে এবং এটি স্টেশনারি পার্ট। ব্রেক প্যাডেল এ চাপ দিলে ফোর্স ব্রেক ক্যালিপারের প্যাডের মাধ্যমে রোটরকে ২দিক থেকে চেপে ধরে। আর এর ফলে জেনারেট হওয়া ঘর্ষণের মাধ্যমে ব্রেকিং সম্পন্ন হয়। এই ঘর্ষণের ফলে ব্রেক রোটরে অনেক তাপ উৎপন্ন হয় এবং তা পরিবেশে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ব্রেক রোটরের ২ দিকের সারফেসের মাঝখানে ফিন থাকে। এই ধরনের ব্রেকিং সিস্টেমের ইফেক্টিভনেস বেশি। তাছাড়া এরা অধিক ডিউরেবল হয়।২। ড্রাম ব্রেকঃ এই ধরনের ব্রেক সিস্টেমে একটি ড্রাম হাবের মাধ্যমে চাকার সাথে যুক্ত থাকে এবং ঘুরতে থাকে। ড্রামের ভিতর ব্রেক পিস্টন এবং ব্রেক শু থাকে। ব্রেক প্যাডেলে চাপ দিলে প্রেশারটা পিস্টনে ট্রান্সমিট হয় এবং তার ফলে ব্রেক শু ২টি ড্রাম এর দিকে সরে যায়। আর ড্রাম এর সাথে ঘর্ষণের ফলে গতিশক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং এর ফলে ব্রেকিং সম্পন্ন হয়। ড্রাম ব্রেকের মাধ্যমে ডিস্ক ব্রেকের তুলনায় কম ব্রেক ফোর্স জেনারেট করা যায়। এজন্য এই ব্রেক সাধারণত যানবাহনের পিছনের চাকায় সাপোর্ট ব্রেক হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
Post a Comment